অপূর্ণতা

Romance

ব্যাপারটাকে কি সিনেমাটিক বলা চলে?
উবারের গাড়িটা হোস্টেলের গেটের সামনে ঠিক সেই সময় রওনক ভাইয়ের ফোন। গতকাল সারাদিন ফোন করেও যে মানুষটার টিকিটাও মিতু খুঁজে পাচ্ছিলনা।
মিতু ফোন ধরবেনা ধরবেনা করেও ধরল। গতকালকের শপথটা বেমালুম ভুলে গেল। আর কক্ষনো এই নাম্বারটায় মিতু ফোন করবেনা, আর কক্ষনো বলবেনা, এক কাপ কফি খাওয়ান…সস্নেহে বলবেনা শেভ করেন, আপনাকে দেখতে লাগছে একটা জংলি ভূত… আরো কী কী যেন…
: হ্যালো… ডিস্টার্বিং গার্ল
: ঘুম ভাঙল?
গলার কেঁপে ওঠাটা মিতু কি আড়াল করতে পারল?
: হ্যা। কী খবর?
: এইতো… আপনার শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছি! জানেনইতো কনভোকেশনের জন্য এসেছিলাম। ভাবলাম শেষবারের মত এক কাপ কফি চেয়ে খাব। তাই ফোন দিয়েছিলাম গতকাল।
: কততম বারের মত চলে যাচ্ছ?
ওপ্রান্তের মানুষটা হাসি চাপল কি?
মিতুর মুখ শক্ত হয়ে গেল।
: শেষবারের মত।
: বাহ! চলে আসো! কফিশপে..
: এখনতো আর সম্ভব না!
: কেন?
: আমার বাস ছেড়ে দিয়েছে।
: তুমি বাসে?
: হ্যা।
মিথ্যেটা বলার সময় খুব সাবধানে দীর্ঘশ্বাস গোপন করল মিতু।
ওপ্রান্তে একটুখানি থমকে গেল কি কেউ?
মিতু বুঝবে কী করে? মিতুর বোঝার দায় নেই আর!
: বেশতো! অল দা বেস্ট। আবার যদি কখনো আমার শহরে আসো জানিও।
: নিশ্চয়ই!
এই মিথ্যেটাও কাঁটার মত বিঁধল কোথাও। নরম কোথাও!
: ভাল থেকো।
: আপনিও…
উবারের ড্রাইভার অস্থির হয়ে আছে। মিতু ফোনটা রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ বন্ধ করে একটা দম নিল৷ পিছুটান রাখা যাবেনা। পিছুটান রাখতে নেই।
ফোনটা রেখে গাড়িিতে উঠে বসল সে। ড্রাইভার বয়স্ক একজন লোক। চেহারায় অস্থিরতা প্রকাশ পেলেও খানিক গাম্ভীর্য ফুটে আছে।
: আংকেল এসিটা বন্ধ করেন প্লিজ! আমার বমি পায়। জানলাটা খোলা থাক।
গাড়ি চলতে শুরু করতেই এক ঝলক হাওয়া মিতুর সামনের চুলগুলো উড়িয়ে নিয়ে চলল যেন।
আকাশটা আজ মেঘলা কেন হলোনা? চারপাশে এত রোদের ছটা কেন? এ কেমন তামাশা!
মিতুর চোখে একটু একটু করে স্মৃতির জলরেখা জমতে থাকে। গাড়ি হালকা জ্যামে পড়েছে। অদূরে দুজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হাততালি দিয়ে গালিগালাজ করছে। তাদের পরনের শাড়ির রঙ, ঠোঁটের কড়া লিপস্টিকের রঙ সব স্পষ্ট বোঝা যায়… বড্ডো চোখে লাগছে!
মিতুর দিকে তাকিয়ে তালি দিতে দিতে ফ্যাঁক ফ্যাক করে হাসতে শুরু করল ওরা কোন কারন ছাড়াই। তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মিতু হঠাৎ হু হু করে কেঁদে ফেলল… দৃশ্যটা কেমন যেন।
একদম এস্থেটিক না। একদমইনা!
বড্ডো হাস্যকর!
মিতুর গাল বেয়ে গড়ানর অবকাশ নেই, বাতাস সেই জলের ফোঁটাগুলো উড়িয়ে নিয়ে গেল দূরে কোথাও… অনেক অনেক দূরে…
আসছে বর্ষায় মেঘ হিসেবে ঝরাবে বলে!
এতটা বেদনাও বুঝি থাকতে নেই কারো যা চেপে রাখতে গেলেই ছলকে ওঠে …
চলন্ত গাড়ির ভেতর মিতুর মুখটা ছোট হয়ে আসে…
ইট পাথরের খাঁজে দুটি সবুজ পাতা জড়িয়ে আছে পরস্পর। আর একটু জল পেলেই হতো ওদের… অথবা আর একটু উষ্ণতা!
ভবঘুরে কারো ভাঙা গিটারের সুর ভেসে আসে৷ সেই সুরে নব্বই দশকের টান লেগে থাকে, লোডশেডিং আর লুকোচুরি… আর স্মৃতিতে স্মৃতিতে একটা বাতাবি লেবুর ঘ্রাণ ভাসতে থাকে… খেলাচ্ছলে জমিয়ে রাখা পুরনো মার্বেল টুপ করে ডুবে যায় বিস্বাদ চায়ের কাপে।
আগামীকাল সন্ধ্যায় মিতুর বিয়ে। কত আনন্দের একটা দিন।

3

অপূর্ণতা

Romance